পিতা-মাতার গুরুত্ব । একজন সাহাবি নবীজি (সা.)–কে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকার সবচেয়ে বেশি কার? নবীজি (সা.) বললেন, তোমার মায়ের। সাহাবি পুনরায় প্রশ্ন করলেন, নবীজি (সা.) বললেন, তোমার মায়ের। সাহাবি আবারও জানতে চাইলেন, নবীজি (সা.) বললেন, তোমার মায়ের। এরপর সাহাবি জানতে চাইলে নবীজি (সা.) বললেন, তোমার বাবার। (বুখারি ও মুসলিম)
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ (رض) أَنَّ رَجُلاً قَالَ يَارَسُولَ اللهِ ! مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا؟ قَالَ هُمَا جَنَّتَكَ
অর্থ : “হযরত আবি উমামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সন্তানের উপর পিতা- মাতার কি অধিকার রয়েছে? তিনি বললেন, পিতা-মাতা তোমাদের বেহেশত এবং দোযখ” [ইবনে মাজা ও মেশকাত ] পিতা-মাতার গুরুত্ব
ব্যাখ্যাঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর এ কথার মর্মার্থ হলো, কোন ব্যক্তি তাঁদের থেকে অমুখাপেক্ষী হতে পারবে না। সামাজিক জীবনে তাঁদের গুরুত্ব ছাড়াও পরকালীন জীবনের মুক্তি ও সাফল্যের দিক থেকেও তাঁদের গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁদের সাথে ভাল ব্যবহার ও আনুগত্য করে এবং সন্তুষ্ট রেখে সন্তান বেহেশতে নিজের ঘর তৈরী করতে পারে। অন্যদিকে তাঁদের অধিকার পদদলিত করে অসন্তুষ্টির কারণে দোযখের ইন্ধনও হতে পারে।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍ (رض) قَالَ قَالَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رِضًا اللهِ فِي رِضًا الْوَالِدِ وَسُخط اللهِ فِي سُخط الوالد-(ترمذی، ابن ماجه، حاکم)
অর্থ : “হযরত আবদিল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যে নিহিত রয়েছে।” [তিরমিজি, ইবনে মাজা, হাকেম ]
ব্যাখ্যা ঃ পিতা-মাতার অধিকার অস্বীকার করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় না। যারা তাঁদেরকে সন্তুষ্ট রাখতে পারে তারাই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে পারে। তাঁদের ক্রোধ-উদ্রেককারীরা আল্লাহর গজব থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারে না এবং যারা তাঁদেরকে অসন্তুষ্ট করবে তারা আল্লাহকেও অসন্তুষ্ট করবে।
عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ جَاهِمَةَ أَنَّ جَاهِمَةَ جَاءَ إِلَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ أُرِدْتُ أَنْ أَعْرُو وَقَدْ جِنْتُ أَسْتَشيرُكَ ؟ فَقَالَ هَلْ لَكَ مِنْ أَمْ قَالَ نَعَمْ ، قَالَ
فَالدَّمُهَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ عِندَ رجلها – পিতা-মাতার গুরুত্ব
“হযরত জাহিমার (রাঃ) পুত্র হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) বর্ণনা করছেন যে, হযরত জাহিমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে হাজির হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার সাথে জিহাদে অংশ গ্রহণ করাই আমার ইচ্ছা। আর এ জন্য আপনার সাথে পরামর্শ করতে এসেছি। বলুন এ ব্যাপারে আপনার নির্দেশ কি? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মাতা কি জীবিত আছেন ? জাহিমা (রাঃ) বললেন, জ্বী। আল্লাহর প্রশংসা যে, তিনি জীবিত আছেন। রাসূল (সঃ) বললেন, তুমি ফিরে যাও এবং তাঁর খিদমতেই লেগে থাকো। কেননা, তাঁর পায়ের নিচেই বেহশত।” [ইবনে মাজা, নাসায়ী]
ব্যাখ্যাঃ “তাঁর পায়ের নিচেই বেহেশত” কথাটি ব্যাপক অর্থে বর্ণনা করা হয়েছে। যার অর্থ হলো, তাঁকে পুরোপুরি সম্মান এবং আচার-আচরণে অত্যন্ত বিনয় দেখাতে হবে। মন-প্রাণ দিয়ে তাঁর খিদমত ও এ খিদমতকেই নিজের মুক্তির মাধ্যম মনে করতে হবে।
উপরের হাদীসে পিতার অনুগত হওয়ার প্রতি গুরুত্ব প্রদান এবং এ হাদীসে মাতার আনুগত্য ও খিদমতের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। এ হাদীস দুটিতে পিতা-মাতা উভয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত জাহিমা (রাঃ) স্বয়ং বলেছেন, আমি হুযুর (সাঃ)-এর খিদমতে হাজির হলাম এবং আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! জিহাদে অংশগ্রহণ করাই আমার ইচ্ছা। এ ব্যাপারে আমি আপনার মত জানতে চাই। তিনি বললেন, তোমার পিতা-মাতা (জীবিত)
তিনি বললেন, যাও, তাঁদের খিদমতেই লেগে থাকো। কেননা, তাঁদের পায়ের নিচে বেহেস্ত আছে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ رَغِمَ أَنْفَهُ ثُمَّ رَغمَ أَنْفَهُ ثُمَّ رَغمَ أَنْفَهُ، قِبْلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ، مَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَوْ أَحَدَهُمَا ثُمَّ لَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ
অর্থ : “হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সেই ব্যক্তি অপমানিত হোক, পুনরায় অপমানিত হোক, আবারো অপমানিত হোক। লোকজন জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর
-বৃদ্ধ অবস্থায় পেল অথবা কোন একজনকে অতপর তাদের খিদমত করে জান্নাতে প্রবেশ করলো না।